শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

পইতালের জীবন মরন খেলা

রুগীঃ “প্রচন্ড পেট ব্যাথা করতেছে”
পইতালঃ < “বুটাপেন খান ঠিক হইয়া যাবে”
“আচ্ছা ট্যাবলেট বের করে রাখেন বাথরুম থেকে আসি”
< “বুঝছি কাহিনি, পেট খারাপ। ফ্লাজিল খান”
.
বাথরুম থেকে আসার পর
রুগীঃ “কিছুই হয় নাই”
পইতালঃ < “বুঝছি তাইলে শরীর কষা, মিল্ক অফ ম্যাগ্নেশিয়া দুই তিন চামুচ খান”
“কিন্তু পেট ব্যাথা তো যাচ্ছে না বাড়ছে”
< “ব্যাথা বেশি??? এক কাম করে রোলাক একটা খেয়ে ঘুম দেন ঠিক হয়ে যাবে”
.
আরো কিছুক্ষন পর
রুগীঃ “এখন তো বুকে ব্যাথা করতেছে”
পইতালঃ < “বুঝছি এডি কিচ্ছু না প্রবলেম আসল জায়গায়। হার্টে। কারভিস্টা ১২.৫ খান”
.
“আরে ধূর এখন দেখি ব্যাথা বাম পাশে না ডান পাশে।”
< “ও হো হো হো, গ্যাস্টিক। এইডাই এতক্ষন জালাইতেছিলো। ভ্যাজাইল্লা জিনিস। এন্টাসিড খান”
“কেমন যেন জ্বর জ্বর মনেহচ্ছে”
< “নাপা খান, ঠিক হইয়া যাবে”
.
“মাথাও ব্যাথা করে”
< “ডিস্পিরিন খাইয়া একটা সাউন্ড স্লিপ দেন।”
“বলি কি ডাক্তার দেখাই। আন্দাজে আর কত ঔষুধ খাবো?”
< “টাকায় কি আপনাগোরে চাবায়?? দুনিয়াদারী আমরা চরায়া বেড়াই না?? ডাক্তার না হইলে কি হইছে, ডাক্তারের চেয়ে কি কম বুঝি? ডাক্তার এডিই দিবো মাঝখান দিয়া কয়েকশ তা ভিজিট সাথে কত্তডি টেস্ট”
.
ডাক্তার দেখায়া আসার পরে,
পইতালঃ “দেখি ডাক্তারে কি দিলো?? ও টেস্ট?? কইছিলাম না টেস্ট দিবো। এডি অগো একটা ব্যাবসা”
.
টেস্টের রিপর্টে টিউমার ধরা পড়ছে। এজ সুন এজ পসিবল অপারেশন করারনোর লাগবে
(মানে হার্ট, পের্ট খারাপ, গ্যাস্টিক, মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথার, জ্বরের জন্য যত ঐষুধ খাইছে সবই হুদ্দাই। আর দিনের পর দিন এতোগুলা আজাইরা ঐষুধের সাইড এফেক্ট যে কি তা ডাক্তারেরা ভালো বলতে পারবে আমার এইসব শুইনা হুদ্দাই গায়ের লোম কাটা বানায়া লাভ নাই)
.
পইতালঃ “পেটে টিউমার?? ও আইচ্ছা, রিপর্টে যা লিখলো তেমন বিরাট কিছু না।হুদ্দাই ডাক্তারের কথা মত বিরাট হসপিটালে যাইয়া আজাইরা টাকা খরছ কইরা লাভ নাই। ওরাও এইডা থেকে কমিশন পায় এই কারনেই ঐ হসপিটালে সাজেস্ট করছে। নরমাল একটা ক্লিনিকে অন্য ডাক্তার দিয়া কম খরছেই করা যাবে এইটা”
.
.
অপারেশনের মাঝে ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে জানায়, রিপর্টে একটু ভুল আসছে। টিউমার আছে তবে রিপর্টে যে সাইজ বলছে তার চেয়ে অনেক বড়+ যেই জায়গা দেখাইছে সেই জায়গায় না টিউমারটা। এই ক্লিনিকে অনেক রিস্কি এই অপারেশন। বড় কোন হসপিটালে নিয়ে যান।
.
পইতালঃ “আপনারা আগের ডাক্তারের রিপর্ট দেখেই অপারেশন করতে গেলেন ক্যান?? শিউর হওয়ার জন্য আবার টেস্ট দিতে পারনে নাই!!?? প্রত্যেক ডাক্তার এই সব ব্যাপারে আগের টেস্ট করা থাকলেও আবার সিউর হওয়ার নিজের পছন্দ মত ডায়গনস্টিক সেন্টারে টেস্ট দেয়, আপনারা দেন নাই ক্যান?? এখন অর্ধেক অপারেশন করে বলেন সম্ভব না!! ফাইজলামি পাইছেন!!!” 
.
.
উপরের কাহিনিটা ৩জনের গত ২০-৩০ বছরের কিচ্ছা মিলায়া একটা ‘বেসিক কাহিনি’ বানাইছি কিন্তু ঘটনা সত্য। তিনজনই আমার কাছের মানুষ।
এক জনকে আল্লাহ উদ্ধার কইরা সুস্থ জীবনে ফেরত আনছে, আরেক জন এখন ক্যান্সারে লাস্ট স্টেজে মৃত্যুর সাথে লড়তেছে আর অপর জন কবরে। মোটামুটি এই তিনজনের জীবনেই “পইতাল সমাজ” অতপ্রত ভাবে জড়িত ছিল।
.
হায়াত মৌত আল্লাহর হাতে কিন্তু ভূগে মানুষ নিজের দোষে। এক জন মানুষের পক্ষে ১০০% অলরাউন্ডার হওয়া সম্ভব না। সো যে যেই ব্যাপারে এক্সপার্ট তার উপর দিয়া নিজে নিজে পইতালি করতে যাইয়েন না।
জীবন মরন খেলা কি জিনিস যাগো উপর দিয়া যায় হেরাই টেরডা পায়, আগে বুঝন যায় না, পরে হারায়া বুঝবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন