শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

খেলা যখন চলতেছিলো

খেলা যখন চলতেছিলো তখন কি একটা কথার ফাঁকে আম্মা বলতেছিলো বেইনসাফি কর্মের ফল মানুষ দুনিয়াতে থাকতেই পায়। হয়তো যার টা সে নিজে দেখতে না পাইলেও তার ফিউচার জেনারেশন হইলেও তা দেখে। 
অনেক্ষন ধরে নেটে খুজতেছিলাম এমন কোন কাহিনি আছে কিনা এবাউট পাকিস্তান ভার্সেস বাংলাদেশ। অবশেষে পাইলাম সাব্বির আহমেদের টাইম লাইনে। 
আসলেই দিন সবাইরই আসে। একটু আগে হোক আর পরে হোক।
.....................
১৯৮৬ সালের কথা। বাংলাদেশের বয়স মাত্র ১৫ বছর, আর এদেশের ক্রিকেটের বয়স মাত্র ১ বছর। এশিয়া কাপ খেলতে যাবে, কিন্তু বিমানের টিকিট কেনার টাকা নেই। এসিসি টাকা দিতে চেয়েছিলো, বাংলাদেশ রাজি হলো না, বরং বাসে করেই গেলো। আমাদের তখন ব্যায়াম করার জিমন্যাশিয়াম নেই। ওরা ১১ জন বিদেশের জিমে ব্যায়াম করে ক্লান্ত হয়ে গেল। ঐ সময় স্যালাইন খাওয়া দরকার। কিন্তু বিদেশী স্যালাইন কেনার টাকাও যে নেই। দেশীয় উপায়ে লবন দিয়ে স্যালাইন বানানো হলো। এ নিয়ে পাকিস্তানি মিডিয়ায় কত হাসাহাসি। পরদিন শক্তিশালী পাকিস্তানের সাথে খেলা। তাইতো রাতে ঘুম এলো না স্বপ্নচারী ঐ ১১ জনের চোখে ।
.
সকালে খুশি মনে ১১ জন আগেই মাঠে ঢুকে গেলো প্র্যাকটিসে। কিন্তু পাকিস্তানের কেউ আসলো না। টসের সময় পাক ক্যাপ্টেন ইমরান খান মাঠের বাইরে থেকে ইশারায় ডাকলেন বাংলার ক্যাপ্টেন লিপুকে। ইমরানের আপত্তি, তোমাদের সাথে টস করে কি লাভ? তোমরাই বলো কী চাও? ব্যাট নাকি বল? লিপু বললো, আমরা টস চাই।ম্যাচ রেফারিও চাপ দিলো ইমরানকে। তখন ইমরান বললো, তাহলে এখানেই টস করেন। আমি কষ্ট করে মাঠের পিচ পর্যন্ত যাবো না। অবশেষে টস হলো মাঠের বাইরে। বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামলো। ইমরান তার মূল বোলারদের বাদ দিয়ে পার্টটাইম বোলারদের দিয়ে বল করাতে লাগলো, আর আমাদের ১টা করে উইকেট পড়তে থাকলো। ভাষ্যকার হাসতে হাসতে বলে উঠলো, "আজ যদি পাকিস্তানীদের স্ত্রী রা বল করতেন, তারাও নিশ্চয়ই উইকেট পেতেন।"
.
২০১৫ সাল। পাকিস্তানে বহুদিন ধরে ক্রিকেট বন্ধ। স্পন্সররা চলে যাচ্ছে। তাদের একাডেমীগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জিম, প্র্যাকটিসের জন্য তারা এখন দুবাইয়ের জিমন্যাসিয়াম ব্যবহার করে। বাংলাদেশে আসার আগে তাদের বিমানের টিকেট কেনার টাকা নেই। কে দিবে টিকেটের টাকা? এগিয়ে আসলো বাংলাদেশ। যেই দেশটার সামান্য স্যালাইন কেনার টাকা ছিলো না বলে হাসাহাসি হয়েছিলো, সেই দেশটা তুলে দিলো আড়াই লক্ষ ডলার! খেলার মাঠে অধিনায়ক মাশরাফি একই কাজ করলেন, যেটা পাকিস্তান করেছিলো ২৯টি বছর আগে। মূল বোলারদের বল না দিয়ে বল দিচ্ছিলো নাসির, সাব্বির, রিয়াদদের। আর তাতেই পাকিস্তানের একেকটা করে উইকেট পড়ছিলো। 
.
ধারাভাষ্যে তখন বসে আছেন বাংলাদেশের আতাহার আর পাকিস্তানের আমীর সোহেল। ২৯ বছর আগের সেই দিনটাতেও এই দুইজন খেলেছিলেন, দুইজনেই ছিলেন দুই দেশের ওপেনার। কিন্তু ইতিহাস মিললো না। আজ আতাহার কিন্তু সেভাবে হাসি-ঠাট্টা করলো না, যেভাবে ২৯ বছর আগে হেসেছিলো পাকিস্তানী ভাষ্যকার। 
.
তবে খেলা শেষে চুপ থাকতে পারলো না পাশে বসে থাকা সেদিনের পাকিস্তানী খেলোয়াড় আমীর সোহেল। তিনি বললেন, " আমি বাংলাদেশের দর্শকদের চোখে আজ আনন্দের রঙধনু দেখতে পাচ্ছি। আনন্দ, যা পাকিস্তানকে ছুয়ে গিয়েছিলো সুদূর অতীতে। সেই আনন্দ হাতবদল করে ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছে। আনন্দপ্রিয় এই দেশটি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ক্রিকেটে,তাদের অবকাঠামোয়,তাদের অর্থনীতিতে।"
.
২৯ বছর আগের সেদিন একজন পাকিস্তানি কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে, তিনি ওয়াসিম আকরাম। তিনি পাকিস্তানি মিডিয়াকে বলেছিলেন বাংলাদেশকে নিয়ে বাজে কিছু না লিখতে। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের সুদিন আসবে,সেদিন তো আপনাদেরকেই লজ্জা পেতে হবে। আজ ২৯ বছর পর তামিম ইকবাল একই কাজ করলেন। বাংলাদেশের মিডিয়াকে বললেন, "ক্রিকেটে খারাপ সময় যায়। এক সময় আমরাও অনেক ম্যাচ হেরেছি,হারতে হারতে শিখেছি। আমার শুভকামনা রইলো, পাকিস্তান খুব জলদি come back করবে"
.
ইংরেজীতে একটা কথার কথা আছে, "History repeats itself" সেই কথাটা যে এমনভাবে সত্যি হবে, ইতিহাসের দেনাগুলো যে এভাবে শোধ হবে ভাবিনি।
-------------------------------------------
(সংগৃহীত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন