বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০১৪

লাইটয়ালা জুতা

এইবারের পাখি ড্রেসের আধিক্য দেখে ল্যাদা কালের কথা মনে পড়লো। প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় একবার ঈদে বের হইছিলো লাইটয়ালা জুতা!! জুতার তলে বাত্তি জ্বলে। প্রথম বছর কিনতে পারি নাই, দাম অনেক বেশি। তাই ঐবার বেশি একটা জোরা জুরি করি নাই আর ঈদের দিন শরমে সবার সাথে খুব একটা ঘুরাঘুরিও করি নাই। 

সম্ভবত ঐ ঈদের দিন সন্ধ্যা আম্মা আর আমি বারান্দায় দাঁড়াইয়া কলোনীর রাস্তায় পোলাপাইনের জুতার তলের লাল বাত্তি জ্বলা নিভা দেখছিলাম। পুরা কলোনীর মাঠ জুতার আলোয় আলোকিত। দেখার মত একটা দৃশ্য। 
পোলাপাইনের জুতার দিকে তাকাইতে তাকাইতে হয়তো আনমনে সপ্নও দেখছি পরের বছর এমন আমিও ঘুরমু বাত্তিয়ালা জুতা পইরা। সবচেয়ে বেশি আলো থাকবে আমার জুতায়। অন্যের জুতা বাদ দিয়া সবাই আমার জুতার বাত্তির দিকেই তাকায়া থাকবে। হয়তো একি সপ্ন আম্মাও দেখতেছিলো।
.
.
আবার ১বছর অপেক্ষার পরে আসলো রোজা। এই বার সবার আগেই আমার জুতার বাজেট ফিক্সড। জাসুসি কইরা যতুটুকু জানলাম জাতি এইবার জাম্প কেডস আর পেগাসাস কেডস বেশি কিনছে (তখন ঈদের ড্রেস জুতা দেখানো মানেই ঈদ শেষ)। বেলী কেডস কেউ কিনে নাই। সো আনকমন থাকার জন্য আমি কিনলাম বেলী কেডস।

সবারই বাত্তিয়ালা জুতা, সবাই সমান সমান কিন্তু গত বছরের জ্বালা তো এখনো কমে নাই।তার উপরে পোলাপাইনের খোটা “তুই এই বার কিনলে কি হইবো আমি তো এই নিয়া কিনছি দুইবার!!আমার দুইটা লাইটয়ালা জুতা, তর থে আগানো  ” 
সুতারাং এনি হাও এইবার হিট তো যাইতেই হবে।

অতপর ঈদ আসলো। আগেই সবার জানা হয়ে গেছে এইবার সবাই লাইট্যালা জুতা কিনছে তাই সন্ধ্যা ৭টায় বিল্ডিং এর ৪ তলায় গুড়াগারা পোলাপাইনের জুতার ফ্যাশন শো হবে। সেখানে বিল্ডিং এর সকল বাসার ভাইয়াকুল, আপুকুল, আন্টি-আংকেলকুল হাজির হবেন। চিন্তা করলাম হিটলারি বুদ্ধি খাটানির এই একখান চান্স। দুই বছরের ক্রেডিট এক লগে লমু 
 
ঈদের দিন পোলাপাইনে সবডিরে কইলাম সবাই লাইট্যালা জুতা কিনছি আইজগা সারাদিন মাইনষেরে বাত্তির জ্বলা নিভা দেখামু। লও কলোনী ঘুরি। পুরা গ্যাং নিয়া ৩ কলনী কয়েকবার চক্কর দিলাম, আশে পাশের এলাকাতেও হাটলাম। দুপুরে বিকালে সবাইরে নিয়া ক্রিকেট-ফুটবল-সাতচারা-ছোয়াছুয়ি মানে দৌড়াদৌড়ি টাইপ খেলা খেল্লাম। সব ঐ জুতা পইরা। যদ্দুর মনেপড়ে বাসায় যাইয়া জুতা খুইল্লা কাউরে রেস্ট নেয়ার চান্সই দেইনাই। সবাই দেখি সামনের দিকে না চাইয়া ঘেডি ঘুরায়া নিজের জুতার বাত্তির দিকে চাইয়া হাটে!! 

বাত্তি তো ঠিকি জলে নিভে কিন্তু সূর্য্যের আলোর জন্য তা দেখা যায় না তাই কেউ টের করতে পারতাছে না কার জুতায় বাত্তি জলে আর কারটা জলে না। আর আমার জুতার বাত্তি যে বহুত আগেই আমি খুইল্লা পকেটে রাইক্ষা দিছি তাও কারো বুঝার উপায় আছিলো না সুর্য্যের কল্যানে। 

রাতের বেলা ৪তলায় লাকি আপুদের বাসার সিড়িতে শুরু হইলো শো অফ। র্যাখম্প মডেলদের মত একজন কইরা আসে, ঘুরায়া প্যাচায়া লাফায়া তার জুতার বাত্তির কারিশ্মা দেখায়। সারাদিন জুতা পড়ে থাকার কারনে ব্যাটারী অনেক কমে গেছে ঠিকি কিন্তু সবার জুতায় একি আলো হওয়ায় তা আর আলাদা ভাবে চোখে পড়তেছে না কারো। একজন একজন করে আসে আর সবাই হাততালি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করে।

ইচ্ছা কইরাই সবার শেষে আসলাম আন-ইউসড ব্যাটারির বাত্তি জুতায় লাগায়া। দুইখান ঘুরান দেয়ার পরেই আন্দাজ করতে পারলাম এইবারের হাততালির আওয়াজটা অন্যদের তুলনায় অনেক জোরেই পড়তাছে মনেহয়। একবার হাটায় সবার মন ভরে নাই, সিড়ির লাইট নিভায়া আবার এক রাউন্ড দিতে বলল সবাই। 

অন্ধকার সিড়িতে এইবারের হাততালি আর শীশ এর আওয়াজ আগের চেয়ে বেশিই লাগতেছিলো সাথে কিছু কমেন্ট এমন, 
“সুসানের জুতার লাইটের আলো দেখছোস, অনেক বেশি উজ্জজল”/ 
“ভালো জুতা কিনছে তো.. অনেক আলো”/
“চয়েজ আছে, আমগো ধামড়াডি কি কিনছে এডি” 
.
.
আন্ধকারে জুতার আবছা মিট মিট আলোয় সিড়ির এক কোনায় দাঁড়ানো আম্মার ওড়নায় মুখ ঢাকা হাসিতেই বুঝা হইয়া গেছে ১বছর আগে বারান্দায় দাঁড়ানো মা-ছেলের সপ্ন সাকসেসফুলি হিট... 

(১৫-২০ বছর আগের কিচ্ছা, আবছা আবছা মনে আছে তাই আবছা আবছা লিখছি  
২-১ লাইন হুবহু নাও হইতে পারে )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন